দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায়সমূহ
শিল্প, প্রতিষ্ঠানে শ্রম, ব্যবস্থাপনার মধ্যে যেমন- দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে তেমনি এর প্রতিকারেরও ব্যবস্থা রয়েছে । সাধারণত দ্বন্দ্ব নিরসনের যেসব ব্যবস্থা বা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. এড়িয়ে যাওয়া :
দ্বন্দ্ব থেকে সংশিষ্টতা প্রত্যাহার করে নেয়াকে এড়িয়ে যাওয়া বা পরিহারকরণ বলে । এক্ষেত্রে বিরোধের সকল পক্ষই দ্বন্দ্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় । ছোটখাটো ও কম জটিলতাপূর্ণ দ্বন্দ্ব থেকে প্রতিষ্ঠানেও নিজেদের মধ্যে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে অভিযোগকারীরা নিজেদের
গুটিয়ে নেয় বা ঘৃন্য এড়িয়ে চলে । Time is a great healer নীতির আওতায় মীমাংসাকারী যখন ঘন্বকে এড়িয়ে চলে বা মীমাংসার জন্য দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয় তখন জমে আপনা - আপনিই দ্বন্দ্ব স্তিমিত হয়ে আসে এবং এর নিরসন হয় ।
২. অভিন্ন লক্ষ্য :
এ পদ্ধতি অনুযায়ী দ্বন্দ্বপূর্ণ যেসব বিষয় সম্পর্কে সংশিষ্ট সকল পক্ষ ঐকমত্য পোষণ করে সেসব বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় । অর্থাৎ সংশিষ্ট সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য অভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ ও সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো হয় । নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার নিমিত্তে দ্বন্দ্বের পক্ষসমূহ দ্বন্দ্ব নিরসনের একমত হয় ।
৩. বলপ্রয়োগ :
ঘন্দ্ব নিরসনের এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো হয় । সাধারণত ঊর্ধ্বতন নির্বাহিগণ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সংশিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেন । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , দু'জন সাধারণ শ্রমিকের মাঝে গোলমাল শুরু হলো । এমতাবস্থায় ফোরম্যান শাস্তি প্রদানের কথা বলে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে । এতে তাদের গোলযোগ বন্ধ হয়ে যায় । অর্থাৎ দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য এক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করা হয় । বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য তিনটি পন্থার আশ্রয় নেয়া হয়ে থাকে । যথা-
( ক ) ব্যক্তিগত প্রাধান্য দ্বন্দ্ব বল প্রয়োগ।
( খ ) সম্মিলিত প্রাধান্য
( গ ) সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাধানের বলে বল প্রয়োগ ।
৪. আপোষ :
এ পদ্ধতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে আলাপ - আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয় । দ্বন্দ্ব নিরসনের এটি একটি কার্যকরী আলোচনা , মধ্যস্থতা ও সালিশির মাধ্যমে আপোষরফা করা যেতে পারে ।
৫. আচরণ পরিবর্তন :
এ পদ্ধতি অনুযায়ী সৃষ্ট বিরোধের সাথে সংশিষ্ট সকল পক্ষের মাঝে আচরণগত পরিবর্তন আনয়ন করা হয় । এক্ষেত্রে কোন একটি পক্ষকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের কথা বলে দ্বন্দ্ব নিরসনে অনুপ্রাণিত করা হয় । আচরণ পরিবর্তনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরামর্শ ও সহায়তা পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়ে থাকে ।
৬. সালিশি এ ব্যবস্থায় দ্বন্দ্বে লিপ্ত পক্ষগুলো :
সমস্যা সমাধানের জন্য মধ্যস্থতাকারীর আশ্রয় গ্রহণ করে । এক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । যেমন- সমস্যা চিহ্নিতকরণ , সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ , বিকল্প নির্ধারণ এবং চূড়ান্তভাবে বিকল্প পছন্দকরণ প্রভৃতি । এভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সালিশ দ্বন্দ্ব নিরসন করে । উল্লেখ্য , সালিশির রায় সংশিষ্ট সকল পক্ষ মানতে বাধ্য থাকে ।
৭. সহযোগিতার মনোভাব দ্বন্দ্ব :
সংশিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব ও ছাড় দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসন করা যেতে পারে । এক্ষেত্রে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে সুবিধাদানের জন্য অপর পক্ষ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করতে পারে । এক পক্ষ অন্য পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেও দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটানো হয় ।
৮. সমস্যা সমাধান এপ্রোচ :
দ্বন্দ্বের বিষয়কে উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে , খোলাখুলিভাবে সংঘর্ষের পার্থক্য করে সঠিক সমাধান খুঁজে নিয়ে দ্বন্দ্বের নিরসন করা হয়ে থাকে ।
৯. কার্যের সমন্বয় বিধান :
প্রতিষ্ঠান ও দলের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় । বিধান করে সংশিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বের নিরসন করা যেতে পারে ।
১০. কাজ ও কাজের অবস্থান পুনবিন্যাস :
দ্বন্দ্বে সংশিষ্ট পক্ষসমূহের কাজের ধরন এবং কাজের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করেও দ্বন্দ্ব নিরসন সম্ভব । এক্ষেত্রে যন্ত্রপাতিসমূহকে এমনভাবে সাজানো ও প্রতিস্থাপন করা হয় যাতে দ্বন্দ্বের এক পক্ষের সাথে অনর্য পক্ষের কাজে কোনো সংশিষ্টতা না থাকে । ভিন্নমুখী কাজ ও অবস্থানের মাধ্যমে দ্বন্দ্বের নিরসন সম্ভব ।
এসব দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রধান কয়েকটি হাতিয়ার বা কৌশল । এসব কৌশল ব্যবহার প্রয়োগ করে দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা সম্ভব ।
Comments
Post a Comment