মানব সম্পদ পরিকল্পনা হচ্ছে সংগঠনের কৌশলগত পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে ভবিষ্যত মানব সম্পদের চাহিদা নির্ধারণ এবং চাহিদা পূরণার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া । এই পদক্ষেপ গ্রহণের সফলতা ও কার্যকারিতার ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে । বস্তুতর মানব সম্পদ পরিকল্পনা কতকগুলো উপাদানের উপর নির্ভরশীল । নিম্নে উপাদানগুলো আলোচনা করা হলো :
📌Table of content
- তথ্য পদ্ধতি ও কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ
- সামগ্রিক মানব সম্পদের পূর্বানুমান
- বর্তমান কর্মীর সংখ্যা নির্ধারণ
- তথ্য পদ্ধতি ও কার্য বিশ্লেষণ
- মানব সম্পদ পরিকল্পনার মূল্যায়ন
- সংগ্রহের জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচি
- সমন্বয় সাধন
- বিকল্প বা সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন
- সংশোধনমূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ
১. তথ্য পদ্ধতি ও কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ :
মানব সম্পদ পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হলো তথ্যসমূহ সংগ্রহ করা । আর তথ্যসমূহ সংগ্রহ করার জন্য তথ্য পদ্ধতি ও কার্য বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে । তথ্যসমূহ হলো : কর্মী সংখ্যা , জ্ঞান , শিক্ষাগত যোগ্যতা অভিজ্ঞতা , দক্ষতা , শারীরিক যোগ্যতা ইত্যাদি । এই তথ্যগুলো তথ্য পদ্ধতি কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায় যা পরিকল্পনা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় ।
২. সামগ্রিক মানব সম্পদের পূর্বানুমান :
মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি উপাদান হলো প্রতিষ্ঠানের সর্বোমোট মানব সম্পদের প্রয়োজনীয়তা পূর্বানুমান করা । পূর্বানুমানকালে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্মীর সংখ্যা দায়িত্ব ও কাজের প্রকৃতি , যোগ্যতা , প্রতিষ্ঠানের আয়তন , বিভাগ ও শাখা - ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয় । সেই সাথে তথ্য পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত কর্মী সংক্রান্ত তথ্যাবলি ও বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হয় ।
৩. বর্তমান কর্মীর সংখ্যা নির্ধারণ :
মানব সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মানব সম্পদ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা । বর্তমান প্রতিষ্ঠানে কর্মীর সংখ্যা কত , তাদের কাজের প্রকৃতি কি , কর্মীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা কতটুকু , দক্ষতা মূল্যায়নের ভিত্তি কি ইত্যাদি বিষয়গুলো এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হয় । এরপরে পূর্বানুমান কৃত জনশক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান জনশক্তির পার্থক্যসমূহ নির্ধারণ পূর্বক কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা যায় ।
৪. তথ্য পদ্ধতি ও কার্য বিশ্লেষণ :
মানব সম্পদ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ সম্পর্কে তথ্যাবলি সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয় । কর্মী বা মানব সম্পদ সংক্রান্ত তথ্যাবলি যেমন কর্মীর সংখ্যা , দক্ষতা , শিক্ষা , অভিজ্ঞতা , যোগ্যতা দায়িত্ব কর্ম প্রকৃতি ইত্যাদি কার্য বিশ্লেষণ ও তথ্য পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায় । এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সেগুলোর ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রূপরেখা ও কর্মসূচি নিরূপণ করা হয় ।
৫. মানব সম্পদ পরিকল্পনার মূল্যায়ন :
গৃহীত পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ভিত্তিক মূল্যায়ন হচ্ছে মানব সম্পদ পরিকল্পনার একটি অন্যতম উপাদান । মূল্যায়নের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা যাচাই ও ত্রুটি বিচ্যুতি নির্ণয়ের জন্য পরিকল্পনা কৃত কাজের সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা করা হয় । এতে কাজের পার্থক্য ও ত্রুটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়ে উঠে ।
৬. সংগ্রহের জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচি :
প্রতিষ্ঠানের জন্য মানব সম্পদ বা জনশক্তি সংগ্রহের বিস্তারিত ও পরিকল্পিত কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়টি এতদসংক্রান্ত পরিকল্পনা গ্রহণকালে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হয় । এটি এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং এই প্রয়োজন পূরণের জন্য কর্মসূচির আওতায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ।
৭. সমন্বয় সাধন :
মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের সাথে মানব সম্পদ কর্মসূচির সমন্বয় সাধন । প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ সাধারণ উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাজ করে এবং এজন্য বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর প্রয়োজন পড়ে । মানব সম্পদ কর্মসূচিকে তাই বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলি ও কর্মীর প্রয়োজনীতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলাই হচ্ছে সমন্বয় সাধনের প্রধান লক্ষ্য ।
৮. বিকল্প বা সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন :
মানব সম্পদ পরিকল্পনার “ কটি বিবেচনা মূলক উপাদান হলো বিকল্প পরিকল্পনা প্রণয়ন করা । অনেক সময় ভবিষ্যতের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সামনে মূল পরিকল্পনা অকার্যকর হবার সম্ভাবনা থাকে । এ অবস্থায় বিকল্প পরিকল্পনা থাকলে পরিবর্তিত অবস্থাতে ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় ।
৯. সংশোধনমূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ :
পরিকল্পনা মূল্যায়নের মাধ্যমে মানব সম্পদ পরিকল্পনার ত্রুটি বিচ্যুতি ও পার্থক্যসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা আবশ্যক । এতে পরিকল্পনা যেমন ত্রুটি মুক্ত হতে পারে , তেমনি এর কৃতকার্যতা নিশ্চিত হতে পারে ।
উপরিউক্ত উপাদানগুলো বিবেচনা করে মানব সম্পদ ফলপ্রসূ হয় । ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য করা সহজ হয় ।
Comments
Post a Comment