প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে সুষ্ঠু মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব। একটি প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব।
মানবসম্পদ পরিকল্পনা যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এটি প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা ও উন্নতির জন্য এর গুরুত্ব বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না । প্রকৃতপক্ষে মানবসম্পদ পরিকল্পনার সাফল্যের উপরই ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভর করে । প্রতিষ্ঠানের জনসম্পদ উপযুক্ত এবং যোগ্যতাসম্পন্ন না হলে অপরাপর সফলতা অর্জন করা যায় না । নিচে রীতিবদ্ধভাবে মানবসম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা দেখানো হলো :
১. ভবিষ্য কর্মীর প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ :
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবিষ্যৎ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণকল্পে মানবসম্পদ পরিকল্পনা অতীব প্রয়োজন । বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মীর সংখ্যা নির্ধারণ , কর্মী সংগ্রহ ও উন্নয়নে মানবসম্পদ পরিকল্পনা বিশেষ প্রয়োজন । কারণ কর্মীর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলে বা তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক সংখ্যক উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ ও নির্ধারণ করা অসম্ভব ।
২. পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো :
বর্তমানে ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশ খুবই পরিবর্তনশীল । বিশ্বায়ন , আন্তর্জাতিক পরিবেশ , শ্রমশক্তির বৈচিত্র্য এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাপনাকে তার কলাকৌশলের পরিবর্তন করতে হয় । এই পরিবর্তিত পরিবেশে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ব্যক্তিরা যাতে সহজে নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারে সে জন্য মানবসম্পদ পরিকল্পনা প্রয়োজন । মানবসম্পদ পরিকল্পনার মাধ্যমে কমীরা পরিবর্তনশীলতা বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নিজেদেরকে পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ।
৩. দক্ষ মানবসম্পদ সংগ্রহ :
মানবসম্পদ পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য কর্মীর যোগ্যতা ও দক্ষতা নির্ধারণ করা হয় । তাই দক্ষ মানবসম্পদ সংগ্রহ করার জন্য মানবসম্পদ পরিকল্পনা অপরিহার্য । মানবসম্পদ পরিকল্পনা ব্যতীত ভবিষ্যৎ কাজের দক্ষতা যোগ্যতা অনুমান করা সম্ভব নয় ।
৪. দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন :
বর্তমানে প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে । উন্নত প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য অদক্ষতার কোনো স্থান নেই । এ পরিস্থিতিতে পুনঃপ্রক্রুিণ ও দক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে । জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করা একমাত্র সুষ্ঠু মানবসম্পদ পরিকল্পনার মাধ্যমেই সম্ভব ।
৫. রণচাতুর্যপূর্ণ পরিকল্পনা :
বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে কারবার প্রতিষ্ঠানকে রণচাতুর্যপূর্ণ পরিকল্পনার আশ্রয় নিতে হয় । প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবস্থাপকরা কারবারের পরিবেশ বিশ্লেষণপূর্বক নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলোর মূল্যায়ন করে । অতঃপর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে । এ সমস্ত রণচাতুর্যপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণে মানবসম্পদ পরিকল্পনা অপরিহার্য ।
৬. কার্য পরিচালনার ভিত্তি :
মানবসম্পদ পরিকল্পনা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকের কার্যাবলির নক্শা তৈরি ও বাস্তবায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে । কর্মী সংগ্রহ , নির্বাচন , প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন , পদোন্নতি , বদলি , ছাঁটাই প্রভৃতি মানবসম্পদ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন মাত্র ।
৭. কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন ব্যয় হ্রাস :
মানবসম্পদ পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মীর উৎস , যোগ্যতা ও দক্ষতা নির্ধারণ করা হয় । ফলে কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয় ।
৮. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি :
মানবসম্পদ পরিকল্পনার ফলে যোগ্য কর্মী নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং অযোগ্য কর্মীদের কর্মহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় । যোগ্য কর্মী নিয়োগের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায় অপরদিকে অযোগ্য কর্মীরা নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য নিজেদের কর্মতৎপরতা বাড়িয়ে দেয় । ফলে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায় ।
৯. প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার উন্নয়ন:
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের সংগ্রহ , উন্নয়ন ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জন ও মুনাফা অর্জনের হার বৃদ্ধিকরণে কার্যকর মানবসম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম । এর দ্বারা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে প্রাতিষ্ঠানকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত করা যায় ।
১০. শ্রম ঘূর্ণায়মানতার হার হ্রাস :
মানবসম্পদ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টি আনয়ন ও মনোবল উন্নত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে শ্রম ঘুর্ণায়মানতার হার হ্রাস করে এবং কার্যে অনুপস্থিতির হার কমিয়ে আনে ।
১১. অপচয় হ্রাস :
মানবসম্পদ পরিকল্পনায় মানবসম্পদের কাম্য এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় । ফলে , শ্রমের অপচয় হ্রাস পায় । আবার দক্ষ কর্মীরা তাদের দক্ষতার ব্যবহার করে সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করে । ফলে উপকরণের অপব্যবহারও কমে যায় । এ সবের কারণে সামগ্রিকভাবে সম্পদের অপচয় হ্রাস পায় ।
ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবীয় ও অমানবীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা । অমানবীয় সম্পদগুলো স্থবির এবং মানবীয় সম্পদের উপর অমানবীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নির্ভর করে । তাই মানবসম্পদ পরিকল্পনার সাফল্যে পুরো ব্যবস্থাপকীয় কাজের সাফল্য নিশ্চিত হয় ।
Comments
Post a Comment