কার্যসম্পাদন মূল্যায়নের উপর প্রভাববিস্তারকারী উপাদানসমূহ
কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কার্যফল মূল্যায়ন অত্যন্ত জটিল ব্যাপার । কারণ এ ধরণের মূল্যায়নের সঙ্গে কতকগুলো উপাদান ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত । এসব উপাদানের কতিপয় আবার কার্যসম্পাদন মূল্যায়নে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে । এসব উপাদান অনুকূল হলে মূল্যায়ন কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় । কিন্তু প্রতিকূল প্রভাবের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে । সাধারণত যে সব উপাদান কার্যসম্পাদন মূল্যায়নকে প্রভাবিত করতে পারে সেগুলো হলো :
১. গ্রহণযোগ্য :
কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন পদ্ধতি অবশ্যই কর্মীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে হবে । যদি কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে কর্মীরা সহযোগিতা করে না এবং প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের ফলাফল গ্রহণ করতে চায় না ।
২. সরলতা :
কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন পদ্ধতি যতদূর সম্ভব সহজ , সরল ও বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয় । মূল্যায়ন পদ্ধতি সহজতর হলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ ও একে স্বাগতম জানাবে । কারণ মূল্যায়ন পদ্ধতি সহজ সরল হলে সব কর্মীই তা বুঝতে পারবে । কিন্তু এ পদ্ধতিটি কঠিন হলে এবং কর্মীরা তা বুঝতে না পারলে তারা সে মূল্যায়নকে মনে প্রাণে গ্রহণ করবে না । এতে কর্মীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে এবং মূল্যায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে ।
৩. সহযোগিতা :
কার্যসম্পাদন মূল্যায়নকালে মূল্যায়নকারী এবং কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব থাকা চাই । উভয় পক্ষের অসহযোগিতা মূল্যায়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে । কারণ পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হতে পারে না । এজন্য প্রতিষ্ঠানে একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন ।
৪. উপযোগী :
কাজের বৈশিষ্ট্যের দিক নজর রেখে যথাসম্ভব উপযোগী মূল্যায়ন পদ্ধতি বাছাই করতে হবে । কারণ ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি অধিক কার্যকর ।
৫. প্রশিক্ষণ :
কার্য মূল্যায়নকারীদের জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে । অনেক ক্ষেত্রে মূল্যায়নকারীর পছন্দ , অপছন্দ , মূল্যবোধ ইত্যাদি সঠিক মূল্যায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে । মূল্যায়ন অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে । তাই মূল্যায়নকারীদের দক্ষতা আবশ্যক ।
৬. উন্নয়নমূখী :
কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন সর্বদা উন্নয়নমুখী হওয়া বাঞ্ছনীয় । মূল্যায়নের ফলে কর্মীদের দক্ষতা ও দুর্বলতার ক্ষেত্রগুলো ধরা পড়ে । এসব দুর্বলতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা প্রয়োজন পড়ে । প্রতিষ্ঠানকে এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী হয়ে কর্মীদের দুর্বলতা দূর বার প্রয়াস চালাতে হয় ।
৭. কার্যসম্পাদনের সঙ্গে পুরস্কারের যোগসূত্র :
যে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সন্তোষজনক ভাবে কার্যসম্পাদনের সঙ্গে পুরস্কার সম্পর্কযুক্ত হয় সেটি একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয় । এ জন্যই অনেকে সন্তোষজনক কার্যসম্পাদনের অনুগামী হিসেবে সঠিক পুরস্কার প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করেন ।
৮. কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ :
কার্য সম্পাদন মূল্যায়নে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা চাই । এরূপ ব্যবস্থা গৃহীত হলে কার্যসম্পাদন মূল্যায়নে কারও মনে কোন প্রকার প্রশ্ন বা সন্দেহের উদ্রেক হবে না । এ ব্যবস্থায় মূল্যায়নকারী বর্তৃক মূল্যায়ন কার্য সমাপ্ত হওয়ার পর তা পুনরায় অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্বারা পুর্নমূল্যায়িত হওয়া প্রয়োজন । এতে দুটি উদ্দেশ্য সাধিত হতে পারে । প্রথমতঃ মূল্যায়ন কার্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হবে এবং দ্বিতীয়ত অবমূল্যায়নের আশঙ্কা ও হ্রাস পাবে ।
৯. যথোপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি :
কাজের প্রকৃতি ধরন বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি বিবেচনা করে মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে । কেননা কার্যসম্পাদন মূল্যায়নের জন্য আদর্শ পদ্ধতি নির্বাচিত না হলে তা থেকে সুফল আশা করা যায় না । তাই বিভিন্ন যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীদের মধ্যে কোন প্রকার বৈষ্ণম্য না করে তাদের সঠিক মূল্যায়ন হওয়া উচিত ।
১০. সংগঠন কাঠামো :
সংগঠন কাঠামো যদি সুবিন্যস্ত থাকে এবং কর্মীদের পদমর্যাদার প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকে তাহলে কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন সফল হতে পারে । কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামো সুবিন্যস্ত না হলে এবং কর্মীদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বণ্টিত না থাকলে মূল্যায়ন বাধাগ্রস্থ হবে এবং সুফল আশা করা যায় না । তাই সঠিকভাবে কর্মী মূল্যায়নের জন্য একটি সুবিন্যস্ত সংগঠন কাঠামো থাকা অপরিহার্য।
১১. আদর্শ পদ্ধতি :
কার্যসম্পাদন মূল্যায়নের জন্য একটি আদর্শ মান নির্ধারণ করা প্রয়োজন । আদর্শ মান মূল্যায়িত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে ।
১২. অনুগমন :
কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অনুগমনের ব্যবস্থা থাকতে হবে । এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন কাজ সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা দেখা যায় । মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথ না হলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয় ।
উপাদানগুলো বিবেচনায় রেখে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হলে মূল্যায়ন কার্যক্রম সফল হয় । তাই এই উপাদানগুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে ।
Comments
Post a Comment