পদোন্নতি কি,পদোন্নতি কাকে বলে,পদোন্নতির উদ্দেশ্য,পদোন্নতির গুরুত্ব,পদোন্নতি, প্রমোশন, প্রমোশন কি, প্রমোশনের গুরুত্ব, প্রমোশন কাকে বলে,

পদোন্নতির সংজ্ঞা। পদোন্নতি কাকে বলে।

সাধারণত পদোন্নতি বলতে পদের উন্নতিকেই বুঝায়। ব্যাপকভাবে বলা যায়, প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কোন কর্মীকে তার বর্তমান পদ হতে উচ্চতর এবং অধীকতর দায়িত্ব ও কর্তব্যপূর্ণ পদে উন্নীত করাকেই পদোন্নতি বলে। পদোন্নতির সাথে সাথে শুধুমাত্র যে পদের উন্নতি হয় তা নয়, বরং এর ফলে কর্মীদের বেতন, পদমর্যাদা, ক্ষমতা, দায়িত্ব কর্তব্য, গুরুত্ব এবং অন্যান্য সুযোগও বৃদ্ধি পায়। কর্মীদের কাজের উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত ও প্রতিভা বিকাশের একটি উত্তম কৌশল হলো পদোন্নতি। তবে, অনেক সময় সুবিধাদি একই সাথে বৃদ্ধি না ঘটলেও তাকে পদোন্নতি বলা যায়। যেমন পদোন্নতি হলো বেতন বৃদ্ধি ঘটল না, তাকে বলা হয় শুষ্ক পদোন্নতি বা ( Dry Promation ) পদোন্নতিকে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিশরদগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, নিম্নে কয়েকটি উপস্থাপন করা হল।

 Edwir B. Flippo এর মতে

মর্যাদা ও দায়িত্বের দিক থেকে উন্নততর এক পদ / চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে পরিবর্তনের সাথে পদোন্নতির সম্পর্কিত।

Pigors and myers এর মতে

 পদোন্নতি হলো কোন কর্মীকে অপেক্ষাকৃত চাকরিতে উন্নয়ন। ভালো এই অর্থে যে , এতে অধিকতর দায়িত্ব মর্যাদা বা সম্ভ্রম ও অধিক দক্ষতা সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ করে বেতন বৃদ্ধি হয়।

Chruden and Sherman এর মতে

পদোন্নতি হলো পদের পরিবর্তন । এ পরিবর্তন হলো সংগঠনের অভ্যন্তরে নিম্ন হতে উচ্চ পদে পদায়ন।

পদোন্নতির উদ্দেশ্য৷ পদোন্নতির গুরুত্ব।

পদোন্নতি হলো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে উৎসাহিত করে কাম্য লক্ষ্য অর্জনের একটি কৌশল কর্মীদের আর্থিক ও মানসিক উন্নয়ন সাধন করে উন্নত মনোবল ও কর্মে - আত্মনিয়োগ করতে আগ্রহী করে তোলাই পদোন্নতির মূল উদ্দেশ্য। পদোন্নতি কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টি আনয়ন করে জীবন মান উন্নতি করে এবং শ্রম ঘূর্ণায়মানতার হার হ্রাস করে।

পদোন্নতির উদ্দেশ্য

১. কর্মীদের প্রতিভা বিকাশের পথ উন্নত করে :

 পদোন্নতির আর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের সৃজনশীল বিকাশের পথকে প্রশস্ত করা। প্রত্যেক কর্মীর ভিতরে সৃজনশীল কোন না কোন প্রতিভা লুকানো থাকে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে তা প্রকাশের সুযোগ পায় না। পদোন্নতির সুযোগ কর্মীদের মধ্যে নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে।

২. কর্মীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন সাধন করে : 

পদোন্নতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো সাংগঠনিক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জন করা। কিন্তু এই লক্ষ্য যথাযথভাবে অর্জনের জন্য প্রথমে কর্মীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন করা দরকার । আর কর্মীদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো পদোন্নতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন।

৩. কর্মীদের কার্যদক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা : 

কর্মীদের কার্যদক্ষতা সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাটাও পদোন্নতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য । প্রতিষ্ঠানের সাফলতা অনেকটাই নির্ভর করে কর্মীদের কার্যদক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর।

৪. কর্মীদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো : 

একটি সংগঠনে যথাযথ নীতি অনুযায়ী পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু থাকলে কর্মীদের মধ্যে পদোন্নতি লাভের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলে তারা সার্বিক সময় পদোন্নতি পাবার আশায় নিজের দক্ষতা উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োগ করে । এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মধ্যে অদক্ষ কর্মীরও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটবে।

৫. দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদেরকে প্রতিষ্ঠানে প্রতি আকৃষ্ট করা : 

যে সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের পদোন্নতির সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে এবং তা অনুসরণ করা হয় , সে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আকর্ষণ থাকে এবং তারা ঐ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আগত ঐ প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ পূরণে সহজ হয়।

৬. কর্মীদের মনোবল উন্নয়ন : 

কর্মী মনোবল প্রতিষ্ঠানের কাম্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্য দিকে মানব সম্পদ উন্নয়নের একটি পন্থা হলো পদোন্নতি সঠিক নীতিতে পদোন্নতি দেওয়া হলে কর্মীর মনোবল বৃদ্ধি পায়।

পদোন্নতির গুরুত্ব

১. মনোবল উন্নয়ন : 

উন্নত বা উঁচু মনোবল সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই দরকার মনোবল উন্নত হলে সংগঠনের কর্মীরা সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করে । ফলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। আবার যথাযথ নিয়মমাফিক পদোন্নতি এর বিষয়টি কর্মীর মনোবল উন্নত করতে সহায়তা করে।

২. কার্যসন্তুষ্টি : 

কাজের প্রতি কর্মীর ঋণাত্মক অনুভূতিই হলো। কর্মসন্তুষ্টি। সংগঠনে কার্যসন্তুষ্টি না থাকলে কাজের মান নিম্নমুখী হয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। অন্যদিকে পদোন্নতি কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টির ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। সুতরাং কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে পদোন্নতির গুরুত্ব অপরিসীম।

৩. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি : 

পদোন্নতি কর্মীদের দীর্ঘদিনের জীবনের পুরস্কারস্বরূপ । এটি কর্মীদের বড় ধরনের অর্জনও বটে । তাই পদোন্নতি পেলে কর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি ঘটে , তারা অনুপ্রাণিত হয় । ফলশ্রুতিতে তাদের সৃজনশীলতার বৃদ্ধি ঘটে।

৪. প্রেষণা বৃদ্ধি করা : 

প্রত্যেক কর্মীর মধ্যেই পদোন্নতি পাবার বাসনা থাকে। কারণ পদোন্নতি প্রাপ্তির সাথে বেশ সুবিধা জড়িত থাকে । এগুলো কর্মীদের জীবনযাত্রার মানকেও উন্নত করে। তাই পদোন্নতি কার্যকে প্রেষণা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. হতাশা দূর করে : 

সংগঠনে কর্মরত কর্মীদের হতাশা প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকে ধীর গতিসম্পন্ন করে এবং সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে আর কার্যক্ষেত্রে হতাশা দূরীকরণে পদোন্নতির বিষয় টনিকের মত কাজ করে।

৬. আনুগত্য বৃদ্ধি : 

প্রতিষ্ঠানের প্রতি যদি আমাদের আনুগত্য না থাকে তবে তাদেরকে দিয়ে খুব ভালো কাজ পাওয়া যায় না। সাংগঠনিক কাজের শতভাগ সফলতা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগতের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। আর কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধিতে পদোন্নতির জুড়ি নেই। কারণ সময়মত সঠিক নীতি অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হলে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সন্তুষ্টি হয়। ফলে তাদের আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।

৭. উত্তম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক : 

যথাযথভাবে পদোন্নতির সুযোগ সংগঠনে শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায় । উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক আজকের দিনের সংগঠন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয় । পদোন্নতির সুযোগ উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

৮. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস : 

সংগঠনে কর্মরত কর্মীরা অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশায় এক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করাকে শ্রম ঘূর্ণয়মানতা বলে । শ্রম ঘূর্ণয়মানতার হার বেশি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের জন্য অমঙ্গলজনক । পদোন্নতি শ্রম ঘূর্ণয়মানতার হারকে হ্রাস করে । কারণ সঠিক সময়ে পদোন্নতি পেলে কর্মীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না।

৯. কাজের স্বীকৃতি : 

পদোন্নতি শ্রমিক কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা স্বীকৃতিস্বরূপ । প্রত্যেকে তার নিজ কাজের স্বীকৃতি পেতে চায় । ভালো কাজের স্বীকৃতি দিলে কর্মীরা কার্যক্ষেত্রে গর্ব অনুভব করে এবং তাদের মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়।

পদোন্নতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সফলতার জন্য খুবই দরকারী একটি বিষয় । এর যথাযথ প্রয়োগ করা হলে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে কর্মসন্তুষ্টি থাকে , শিল্প বিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না । ফলে সার্বিকভাবে সংগঠনের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।