বাংলাদেশের সরকারি অফিসের শৃঙ্খলা বিধান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অফিসগুলোয় শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন । এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি অফিসগুলোয় শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ( নিয়মিত উপস্থিত ) অধ্যাদেশ - ১৯৮২ জারি করেন । এই অধ্যাদেশ অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত অফিসে উপস্থিতি বিধিবিধানগুলো হলো।
১. বিনানুমতিতে কাজে অনুপস্থিতির শান্তি :
যদি কোনো সরকারি কর্মচারী তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ছুটিতে যায় অথবা কাজে অনুপস্থিত থাকে তবে কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য একদিনের মূল বেতন কর্তন করতে পারবেন ।
ব্যাখ্যা : এই ধারার বিধান দুই ভাবে প্রযোজ্য হতে পারে । প্রথমত , ছুটির দরখাস্ত দাখিল করে অনুমোদনের আগেই অফিস ত্যাগ করা এবং দ্বিতীয়ত , কোন প্রকার দরখাস্ত না দিয়েই অফিস পরিত্যাগ করা । উভয় ক্ষেত্রে এই ধারা সমভাবে প্রযোজ্য , এই ধারার প্রতিদিনের ঘটনার জন্য একদিনের মূল বেতনের সমান অর্থ কাটা যাবে । বাড়িভাড়া ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাদি কর্তন করা যায় না । প্রতি মাসের একদিনের মূল বেতনের সমান অর্থ কাটতে হবে , তবে সেলফ্ ড্রয়িং অফিসারের । ( Self drawing officer ) বেলায় বেতন বিল হতে এই অর্থ কর্তন করার নির্দেশ দিয়ে তাকে ও সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে এই কথা জানাতে হবে । তিনি ( সেলফ ড্রয়িং অফিসার ) emelet যদি কর্তন না করেন তা হলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ঐ পরিমাণ অর্থ কর্তন করবেন । সেই সাথে উক্ত দিন বিনা বেতনে ছুটি হিসাবে গণ্য হবে ।
২. বিনানুমতিতে অফিস ত্যাগের শান্তি :
যদি কোনো কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে অফিস চলাকালীন অফিস ত্যাগ করে তবে কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ঘটনার জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটতে পারবে ।
ব্যাখ্যা : বিনা প্রয়োজনে ঘন ঘন ডেস্ক পরিত্যাগ করা যাবে না । কোথাও যেতে হলে গন্তব্যস্থান ও ফিরে আসার সময় সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে অবহিত করতে হবে ।
৩. বিলম্ব উপস্থিতির শান্তি :
যদি কোনো সরকারি কর্মচারী দেরিতে অফিসে আসেন তবে কর্তৃপক্ষ প্রতি দুই দিনের বিলম্বে উপস্থিতির জন্য এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কর্তন করতে পারবে।
ব্যাখ্যা : অফিস সময় শুরু হওয়ার এক মিনিট পর অফিসে উপস্থিতির জন্যও শাস্তি প্রদান করা যায় । যানবাহন না পাওয়া , খারাপ আবহাওয়া , সরকারি যানবাহন দেরিতে আসা বা অপরিহার্য ব্যক্তিগত কাজ কোনো বৈধ অজুহাত হিসাবে গণ্য হবে না । গুরুতর ও আকস্মিক অসুস্থতার জন্য বিনানুমতিতে অফিস পরিত্যাগ অথবা অফিসে অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে স্বজন সমদ প্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারের ডাক্তারি সনদের সমর্থন থাকলে বৈধ অজুহাত হিসাবে গণ্য হতে পারে ।
৪. অপরাধ পুনরাবৃত্তি শান্তি :
কোনো সরকারি কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে উপরের ১ , ২ ও ৩ নং - এ বর্ণিত অপরাধ একাধিকবার করলে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ৭ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কর্তন করতে পারবে ।
ব্যাখ্যা : ৩০ দিনের মধ্যে বিনানুমতিতে কার্যে অনুপস্থিতি , বিনানুমতিতে অফিস পরিত্যাগ বা বিলম্বে উপস্থিতি যদি একের অধিকবার সংঘটিত হয় তবে উপর্যুক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি ছাড়া আরো ৭ দিনের মূল বেতন কর্তন করা যেতে পারে । যেমন -৪ দিন বিলম্বে উপস্থিতির জন্য ২ + ৭ = ৯ দিনের মূল বেতনের সমান অর্থ কাটা যাবে । অভ্যাসগত অপরাধীদের বেলায় সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা আপিল বিধি ১৯৮৫ - এর আওতায় বিভাগীয় মামলা রুজু করতে হবে ।
৫. পুনর্বিবেচনার আবেদন :
কোনো সরকারি কর্মচারী এই আইনের উল্লিখিত ১ , ২ , ৩ ও ৪ নং পয়েন্টে উল্লিখিত অপরাধের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হলে ঐ সরকারি কর্মচারী আদেশ প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঐ আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারে এবং কর্তৃপক্ষ যথাযথ শুনানির পর উপযুক্ত মনে করলে আদেশ পুনর্বিবেচনা বাতিল অথবা বহাল রাখতে পারে ।
ব্যাখ্যা : শাস্তির আদেশ অভিযুক্তকে যথারীতি জানাতে হবে । বর্তমানে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী পিওন বইয়ে লিপিবদ্ধ করে অথবা রেজিস্টার্ড ডাকযোগে উক্ত আদেশ জানা হয় । উভয় অবস্থাতে আদেশ প্রাপ্তির সার্ভিস রিটার্ন থাকতে হবে । আদেশ গ্রহণ অথবা গ্রহণে অস্বীকৃতির বেলায় প্রদানের প্রস্তাবের সময় হতে ৪৮ ঘণ্টা গণনা করা হবে । উক্ত ৪৮ ঘণ্টা পর তার কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না । এরূপ অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের ঘটনার জন্য অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা গণনা করা হবে । উক্ত ৪৮ ঘণ্টা পর তার কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না । এরূপ অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের ঘটনার জন্য অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টায় পর পুনর্বিবেচনার জন্য দরখাস্ত গ্রহণ করা যাবে । পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে শুধু সাক্ষীর স্মারক , সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তের কারণগুলো লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন ।
৬. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাথে পরামর্শ :
সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা নিয়মিত উপস্থিতি অধ্যাদেশ - ১৯৮২ এর কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাথে পরামর্শের কোনো আবশ্যকতা নেই ।
ব্যাখ্যা : যেসব ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরামর্শ প্রয়োজন হয় তা পাবলিক সার্ভিস কমিশন ( কনসালটেশন রেগুলেশন ) ১৯৭৯ - তে উল্লিখিত আছে । সরকারি কর্মচারী ( শৃঙ্খলা ও আপিল ) বিধি - ১৯৮৫ - এর ৭ ( ৭ ) বিধি মোতাবেক গুরুতর শাস্তির ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে । কিন্তু এই অধ্যাদেশের আওতায় শাস্তির ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাথে পরামর্শের কোনো আবশ্যকতা নেই ।
৭. আদালতের এখতিয়ার রহিত :
বর্তমান অধ্যাদেশের আওতায় কোনো কার্যক্রম বা আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আদালতের কোনোরূপ প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না । ব্যাখ্যা : এই অধ্যাদেশের অধীনে কোনো কার্যক্রম বা আদেশের বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি আদালতে বা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুন্যালে কোনো প্রকার মামলা দায়ের করা যাবে না ।
Comments
Post a Comment